তিন গিরিসংকটের বাঁধ বা তিন গলার বাঁধ (চীনা ভাষায়: 三峡大坝) চীনের হুবেই প্রদেশের য়িলিং জেলার স্যান্ডৌপিং শহরে ইয়াং চি কিয়াং নদীর উপর স্থাপিত একটি জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের বাঁধ। প্রতিষ্ঠাকালীন ক্ষমতার (২২৫০০ মেগাওয়াট) বিবেচনায় এটি পৃথিবীর বৃহত্তম শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র। ২০১৪ সালে এটি ৯৮.৮ টেরাওয়াট-ঘন্টা শক্তি উৎপাদন করে বিশ্বরেকর্ড সৃষ্টি করে, তবে ২০১৬ সালে ইতাইপু ড্যাম ১০৩.১ টেরাওয়াট-ঘন্টা বিদ্যুৎ উপাদনের মাধ্যমে তিন গিরিসংকটের বাঁধ অতিক্রম করে যায়।
শেষ প্রধান ভূনিম্নস্থ পানির টারবাইনের বিদ্যুৎ উৎপাদনের মধ্য দিয়ে ২০১২ সালের ৪ জুলাই কিছু লক ছাড়া পুরো প্রকল্পটির বিনির্মাণ সম্পূর্ণ হয়। শিপ লিফটের কাজ ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয়। এর প্রতিটি প্রধান ওয়াটার টারবাইনের ক্ষমতা ৭০০ মেগাওয়াট। ২০০৬ সালে বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছিল। ৩২টি প্রধান টারবাইনের সাথে দুটি ৫০ মেগাওয়াটের ছোট টারবাইন জোড়ায় কাজ করলে এর মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা হয় ২২৫০০ মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি এই বাঁধটি নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি করে এবং পানিধারণের মাধ্যমে নিম্নভাগে বন্যার আশঙ্কা হ্রাস করে। এই প্রকল্পটি চীনের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে একটি সফল প্রকল্প যেখানে বৃহদায়তন টারবাইনের নকশা করা হয়েছে এবং গ্রিনহাউস গ্যাস এর নিঃসরণ যথাসম্ভব কমানো হয়েছে। with the design of state-of-the-art large turbines, and a move toward limiting greenhouse gas emissions. তবে প্রকল্পটি কিছু প্রত্নতত্ত্ব ও সাংস্কৃতিক স্থল প্লাবিত করেছে এবং প্রায় ১.৩ মিলিয়ন লোককে বাস্তুচ্যুত করেছে। এটি পরিবেশগত পরিবর্তনের পাশাপাশি ভূমিধস এর ঝুঁকি বাড়িয়েছে। বিবিধ কারণে বাঁধটি দেশে বিদেশে আলোচিত ও সমালোচিত।
তিন গিরিসংকটের বাঁধ | |||||||
সরলীকৃত চীনা | 三峡大坝 | ||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
ঐতিহ্যবাহী চীনা | 三峽大壩 | ||||||
|
|||||||
বিকল্প চীনা নাম | |||||||
সরলীকৃত চীনা | 长江三峡水利枢纽工程 | ||||||
ঐতিহ্যবাহী চীনা | 長江三峽水利樞紐工程 | ||||||
আক্ষরিক অর্থ | ইয়াংচি নদীর তিন গিরিসংকটের হাইড্রোলিক হাব প্রকৌশল প্রকল্প | ||||||
|
১৯১৯ সালে সান ইয়াত-সেন ‘দ্য ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অফ চীন’ এ ইয়াং চি কিয়াং নদীর উপর প্রথম একটি বাঁধের চিন্তা করেন। তিনি বলেন থ্রি গর্জেস বা গিরিসংকটত্রয়ের নিচে ৩০ মিলিয়ন অশ্বক্ষমতা (২২ গিগাওয়াট) সম্পন্ন বাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব। ১৯৩২ সালে চিয়াং কাই-শেক এর নেতৃত্বে দ্য ন্যাশনালিস্ট গভর্নমেন্ট এর প্রাথমিক পরিকল্পনার কাজ শুরু করেন। ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় চীন-জাপান যু্দ্ধ এর ফলে জাপানি বাহিনী ইচাং দখল করে নেয় এবং সেখানে ভূমি-জরীপ চালায়। জাপানের বিজয়ে বাঁধের ওটানি পরিকল্পনা সম্পন্ন করা হয়।
১৯৪৪ সালে ইউনাইটেড স্টেটস ব্যুরো অফ রিক্লেমেশন-এর প্রধান প্রকৌশলী জন এল স্যাভেজ জায়গাটির জরীপ করে ‘ইয়াংৎজ নদী প্রকল্প’-এ বাঁধের প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। তখন ৫৪ জন চীনা প্রকৌশলী প্রশিক্ষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান। বাঁধের প্রাথমিক পরিকল্পনায় শিপ চলাচলের জন্য একটি অনন্য পদ্ধতির প্রস্তাব ছিল। শিপগুলো বাঁধের উপরের ও নিচের লকের মধ্যে চলাচল করতে পারে এবং তারযুক্ত ক্রেন দিয়ে এক লক থেকে অন্য লকে নেওয়া যায়। ছোট জলযানের ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য অনেকগুলোকে একসাথে পার করা হয়। স্থান পরিদর্শন, জরিপ, অর্থনৈতিক সমীক্ষা, নকশা প্রণয়ন প্রভৃতি কাজ হলেও চীনা গৃহযুদ্ধ-এর মাঝামাঝি সময়ে সরকার ১৯৪৭ সালে এর কাজ বন্ধ করে।
১৯৪৯ সালের পরে মাও ৎসে-তুং প্রকল্পটি সমর্থন করেন তবে নিকটস্থ গেজহউবা বাঁধের কাজ প্রথম করা হয়। চীনের সম্মুখগামী মহালম্ফ ও সাংস্কৃতিক বিপ্লব-এর ফলে উদ্ভূত অর্থনৈতিক সংকটের কারণে কাজ বিলম্বিত হয়। ১৯৫৪ সালে ইয়াংৎজ নদীর বন্যার পর ১৯৫৬ সালে মাও ৎসে তুং ইয়াংৎজ নদীর উপর বাঁধ এর বিষয় তাঁর আবেগ নিয়ে ‘সাঁতার’ কবিতা লিখেন। ১৯৫৮ সালে চীনের শত ফুলের বিপ্লব এর পরে, যেসকল প্রকৌশলী প্রকল্পটির বিরোধিতা করে তাদের কিছু অংশকে কারাবন্দি করা হয়।
১৯৮০ সালের দিকে প্রকল্পটি পুনরায় আলোচনায় আসে। ১৯৯২ সালে ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস প্রকল্পটি অনুমোদন করে। ২৬৩৩ জন প্রতিনিধির মধ্যে ১৭৬৭ জন পক্ষে, ১৭৭ বিপক্ষে, ৬৬৪ জন মতামতহীন ভোট দেন এবং ২৫ জন ভোট থেকে বিরত থাকেন। ১৯৯৪ সালে ১৪ ডিসেম্বর এর নির্মাণ আরম্ভ হয়।
২০০৯ সালের মধ্যে প্রকল্পটি পুরোদমে চালু হওয়ার কথা থাকলেও কিছু আনুষঙ্গিক প্রকল্প যেমন ছয়টি অতিরিক্ত জেনারেটরসহ ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রভৃতির কারণে এটি ২০১২ সালের মে মাসে গিয়ে শেষ হয়। [] শিপ লিফটের কাজ ২০১৫ সালে সম্পন্ন হয়। ২০০৮ সালে বাঁধটি এর জলাধারে পানির উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৭২.৫ মিটার (৫৬৬ ফুট) উঁচুতে নেয় এবং ২০১০ সালে এই উচ্চতা সর্বোচ্চ নকশার ১৭৫ মিটার (৫৭৪ ফুট) এ উন্নীত করতে সক্ষম হয়।