পেনা জাতীয় প্রাসাদ (পর্তুগীজ: Palácio Nacional da Pena) পর্তুগালের সিন্ট্রা শহরের সাও পেদ্রো ডি পেনাফেরিম –এ অবস্থিত একটি রোমান্টিকটিস প্রাসাদ। এই প্রাসাদ সিন্ট্রা শহরের একটি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত, রৌদ্রজ্জ্বল দিনে এই প্রাসাদটি লিসবন থেকে এবং শহরের অন্যান্য স্থান থেকে সহজেই দেখা যায়। এটি একটি জাতীয় স্থাপনা এবং এটি মাধ্যমে ১৯ শতকের রোমান্টিসজিমের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এটি ইউনেস্কো’র তালিকাভুক্ত বিশ্ব ঐতিহ্য এবং পর্তুগালের সপ্তাশ্চর্যের একটি। এছাড়া এই প্রাসাদটি সরকারী অনুষ্ঠান অথবা পর্তুগীজ রিপাবলিকের রাষ্ট্রপতির সারকারী অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহৃত হয়।
এই প্রাসাদটির ইতিহাস শুরু হয় মধ্যযুগে, যখন চ্যাপেল আওয়ার লেডি অব পেনা’কে উৎসর্গ করে সিন্ট্রা শুহরের পাহাড়ের উপর এই প্রাসাদটি নির্মান করেন। ঐতিহ্য অনুযায়ী বলা হয়, কুমারী ম্যারি আবির্ভূত হওয়ার পর এই প্রাসাদের নির্মানকাজ শুরু হয়।
১৪৯৩ সালে, রাজা জন II, তার স্ত্রী রাণি লিওনর এর সাথে তীর্থযাত্রা করার পর, তার প্রতিজ্ঞা পূরণ করেন। তার উত্তরাধিকার রাজা ম্যানুয়েল I, এই পবিত্র স্থাপনাটি তার অনেক প্রিয় ছিল। তিনি সন্নাসী জেরমোর কর্তৃক আদেশ পাওয়ার ফলে এই স্থানে একটি আশ্রম তৈরী করার জন্য অর্থ দান করেন। ঐ শতকে পেনা অনেক ছোট ছিল, ধ্যানের জন্য উপযুক্ত স্থান, ওখানে সর্বোচ্চ ১৮ জন সন্নাসী থাকতে পারত।
১৮ শতকে, আশ্রমটি বজ্রপাতে একেবারেই ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়ে যায়। যাহোক এটা ছিল লিসবনের সবচেয়ে মারাত্মক ভূমিকম্প। এর কিছুদিন পর আশ্রমটি সংস্কার করার জন্য উচ্চহারে ট্যাক্স আরোপ করা হয়। যদিও “চ্যাপেল” ( একটি মার্বেল পাথরের সুন্দর কারুকাজ এবং নিকোলাউ চানটেরিন এর সমাধী) যা ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয় নি। অনেক দশক ধরে ঐ ধ্বংসাবশেষের কোন সংস্কার করা হয় নি, যদিও তখনও ওগুলো যুবরাজ ফেরদিনান্দকে আশ্চর্য করত। ১৮৩৮ সালে, যুবরাজ ফেরদিনান্দ রাজা হওয়ার পর, সিদ্ধান্ত নেন ঐ পুরাতন আশ্রমটি সংস্কার করবেন। এবং সংস্কার কাজ চলতে থাকে ১৮৪২-১৮৫৪ পর্যন্ত। যদিও এর সংস্কারকাজ ১৯৪৭ এর দিকে প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিল। রাজা ফেরদিনান্দ এবং রাণি মারিয়া II, ঐ স্থাপনার সাজসজ্জা ও প্রতীকিকরণে প্রধান ভূমিকা পালন করেন।
১৮৮৯ সালে এই স্থাপনাটি পর্তুগীজ সরকার ক্রয় করে নেন। এবং ১৯১০ সালের স্বাধীনতা আন্দোলনের পর এই স্থাপনাকে জাতীয় স্থাপনার স্বীকৃতি ও যাদুঘরে পরিণত করা হয়। এই প্রাসাদে পর্তুগালের সর্বশেষ রাণী অ্যামেলিয়া তার অন্তিম দিনগলো কাটান, তার স্মৃতিগুলো যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
প্রাসদটি খুবই দ্রুত পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং তা পর্তুগালের সবচেয়ে ভ্রমনবিলাস্থানে পরিণত হয়। সময়ের সাথে সাথে এর লাল ও হলুদ রঙ ঝাপসা হয়ে যায়। পরবর্তীতে অনেক বছর এটা দেখতে ধুসর রঙের ছিল। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে এই প্রাসাদ পুনরায় রঙ করা হয় এবং তার আগের রঙ পুনরুদ্ধার করা হয়।
১৯৯৫ সালে, প্রাসাদটি ও এর বাগান, আশপাশ এলাকাকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যে তালিকাভুক্ত করে।
এই প্রাসাদের গঠন শৈলীতে রোমান্টিসজিমের পূর্ণ বহইপ্রকাশ ঘটেছে। এই স্থাপনায় অভিপ্রেতভাবে অনেক ধরনের কারুকাজ অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়েছে যেমনঃ নব্য গোথিক, নব্য ম্যানুলাইন, নব্য ইসলামী এবং নব্য রেনেসাঁ ইত্যাদির কারুকাজের সমাবেশ দেখা যায় এই স্থাপনায়। প্রায় পুরো প্রাসাদটি পাথরের উপরের অবস্থিত।
গঠঙ্গত দিক থেকে প্রাসাদটি চারটি অংশে ভিবক্তঃ
হাইরোনোমাইট মঠ, খাবারের ঘর (ডাইনিং রুম), ম্যানুলাইন-রেনেসা চ্যাপেলের অবশিষ্ট অংশ যথাসম্ভব সংরক্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে যাদুঘরে। এর সংরক্ষিত সব মূল্যবান জিনিস একটি নতুন চত্বরসহ একটি এলাকায় সংযুক্ত করা হয়েছে যার মধ্যে একটি ক্লক টাওয়ার বিদ্যমান। রাণী চত্বর থেকে পুর এলাকার সবচেয়ে ভাল ছবি তোলা যায়। এই চত্বরে একটি সূর্য-ঘড়ি ও একটি কামান সংযুক্ত আছে। ক্লক টাওয়ারটির নির্মানকাজ ১৮৪৩ সালে সমাপ্ত হয়।
পেনা প্রাসাদটি অভ্যন্তরভাগ রাজকীয় পরিবারের জন্য গ্রীষ্মকালীন বাসস্থানের উপযোগী করে তৈরী করা হয়েছে। এই প্রাসাদে বহু মূল্যবান রাজকীয় সংগ্রহ বিদ্যমান যেমনঃ অভ্যন্তরভাগের ১৯ শতকের বিভিন্ন ছবি সম্পন্ন টাইলস দ্বারা আবৃত দেয়াল, ত্রোম্প-ল’ইয়েল এর রঙিন দেয়াল ইত্যাদি।
পেনা হল ২০০ হেক্টর বিশিষ্ট একটি বিশাল বন, যা পুরো প্রাসাদকে ঘিরে আছে। পার্কটি তৈরী করেন রাজা ফেরদিনান্দ II, প্রাসাদ তৈরীর সময়। রাজা এই বাগানটি তৈরীতে বিভিন্ন দেশ থেকে গাছ আনেন। এই বাগান তৈরীর জন্য উত্তর আমেরিকা ম্যাগনোলিয়া, সেকুউইয়া, ল'সন্স সাইপ্রাস আরো অনেক প্রজাতী গাছপালা আনেন