ভেলানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (আইএটিএ: MLE, আইসিএও: VRMM) (ধিবেহী: ވެލާނާ ބައިނަލްއަޤުވާމީ ވައިގެ ބަނދަރު), যেটি মালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নামেও পরিচিত, ভূতপূর্ব ইব্রাহীম নাসির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, মালদ্বীপের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এটির অবস্থান রাজধানী মালের কাছেই হুলহুলে দ্বীপে। বর্তমানে, এই বিমানবন্দর বিশ্বের প্রায় বড় বিমানবন্দরগুলোর সঙ্গে যুক্ত এবং পর্যটকদের মালদ্বীপে প্রবেশের দ্বার। এই বিমানবন্দরের আর্থিক এবং প্রশাসনিকভাবে পরিচালিত হয় মালদ্বীপ এয়ারপোর্টস কোম্পানি লিমিটেড নামে এক স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান দ্বারা।
এই বিমানবন্দরের যাত্রা প্রথম শুরু হয় ছোট দ্বীপে এবং পরবর্তীতে হুলহুলে দ্বীপে জনবসতি হয়। ১৯৬০ সালের ১৯ অক্টোবর হুলহুলে বিমানবন্দর চালু হয়। প্রথমে বিমানবন্দরটির রানওয়ে ছিল ইস্পাতের তৈরি এবং রানওয়ের ছিল ৭৫ ফু × ৩,০০০ ফু (২৩ মি × ৯১৪ মি)। রয়াল নিউজিল্যান্ড বিমান বাহিনীর পরিবহন বিমান ১৯৬০ সালের ১৯ অক্টোবর ১৩ঃ৫৫ ঘটিকায় এখানে প্রথম অবতরণ করে। বাণিজ্যিক বিমান হিসাবে এয়ার সিলনের ফ্লাইট (4R0ACJ) এই বিমানবন্দরে অবতরণ করে ১৯৬২ সালের ১০ এপ্রিল ১৫ঃ৫০ ঘটিকায়। মালদ্বীপের মালিকানাধীন প্রথম বিমান অবতরণ করে ১৯৭৪ সালের ৯ অক্টোবর।
১৯৬৪ সালের মে মাসে মালদ্বীপের সরকার এবং জনগন একসাথে নতুন আস্ফাল্ট রানওয়ে নির্মাণের কাজ শুরু করে। নতুন রানওয়ে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহীম নাসির ১৯৯৬ সালের ১২ এপ্রিল ১৬ঃ০০ ঘটিকায় এই রানওয়ের উদ্বোধন করেন।
১৯৭২ সালে মালদ্বীপে যখন পর্যটনের বিকাশ শুরু হয়, তখন দেশটির একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রয়ন পরে বিদেশি পর্যটকদের আগমনের জন্য। সেকারনে, ১৯৮১ সালের ১১ নভেম্বর, এই বিমানবন্দরটি "মালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর" নামে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।
১৯৯৪ সালের ১লা জানুয়ারী মালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিচালনা ও ব্যস্থাপনার জন্য "মালদ্বীপ এয়ারপোর্টস কোম্পানি লিমিটেড" গঠন করে। মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত পরিচালনা পর্ষদ মালদ্বীপ এয়ারপোর্টস কোম্পানি লিমিটেড নিয়ন্ত্রণ করে।
২০১০ সালে, নাশিদ প্রসাশন বিমানবন্দরটি বেসরকারি খাতে পরিচালনার জন্য দরপত্র আহবান করে। সরকারি ফি ও ২০১৪ সালের মধ্যে বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের জন্য ১ বিলিয়ন মালদ্বীপ রুফিয়ার বিনিময়ে জিএমআর গ্রুপ এবং মালয়েশিয়া এয়ারপোর্টস -এর কনসোর্টিয়াম বিড লাভ করে, এই কনসোর্টিয়াম ২৫ বছর বিমানবন্দরটি পরিচালনা করবে।
বছরের শেষের দিকে, মালদ্বীপ এয়ারপোর্টস কোম্পানি লিমিটেড আনুষ্ঠানিকভাবে জিএমআর মালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লিমিটেডকে অ্যারোড্রোম লাইসেন্স প্রদান করে। জিএমআর মালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লিমিটেড রানওয়ের জন্য জমি অধিগ্রহনসহ উন্নয়ন পরিকল্পনা ঘোষণা করে; যেখানে নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণ করার কথা। এই টার্মিনাল তিনটি আলাদা ভবন সমন্বয়ে। আলাদা কার্গো টার্মিনাল নির্মাণের ঘোষণা দেয়া হয়। যাইহোক, প্রকল্পটি অনেক বিলম্বের সম্মুখীন হয়।
মালদ্বীপের ২য় রাষ্ট্রপতি ও বিমানবন্দরের উদ্যোগতা ইব্রাহীম নাসিরের স্মরণে, ২০১১ সালের ২৬ জুলাই মালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ইব্রাহীম নাসির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
২০১২ সালের শেষের দিকে, ওয়াহিদের মালদ্বীপের নতুন প্রশাসন ছাড় চুক্তিকে অবৈধ ঘোষণা করে এবং ২৭ নভেম্বর ২০১২ সালে জিএমআর মালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লিমিটেডকে "বিমানবন্দর খালি করার" জন্য ৭ দিনের সময় দেয়, যে সিদ্ধান্তটি বিরোধীদল থেকে ব্যপক প্রতিবাদ করা হয়, এমনকি ভারতীয় সরকার এবং গনমাধ্যমেও সমালচনা করা হয়। ডিসেম্বরের ৭ তারিখে জিএমআর মালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লিমিটেড সরকারকে বিমানবন্দর বুঝিয়ে দেয় এবং মালদ্বীপ এয়ারপোর্টস কোম্পানি লিমিটেড এই বিমানবন্দর পরিচালনার দায়িত্ব পুনরায় লাভ করে।
২০১৭ সালের ১লা জানুয়ারী থেকে এই বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়, ভেলানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ইয়ামিন প্রশাসন অর্থনীতির দূরদর্শিতার কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ হিসাবে এই নাম পরিবর্তন করা।
এই বিমানবন্দর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬ ফুট (২ মি) উপরে। এটির একটি আস্ফাল্ট রানওয়ে (18/36) আছে, যার পরিমাপ ৪৫ মি × ৩,২০০ মি (১৪৮ ফু × ১০,৪৯৯ ফু). পার্শ্ববর্তী ওয়াটারড্রোমে নৌবিমানের জন্য চারটি জল রানওয়ে আছে, NR/SL, NC/SC, NL/SR and E/W, যাদের পরিমাপ ৬০ মি × ১,১৯০ মি (২০০ ফু × ৩,৯০০ ফু), ৬০ মি × ১,১০০ মি (২০০ ফু × ৩,৬১০ ফু), ৬০ মি × ১,০০০ মি (২০০ ফু × ৩,২৮০ ফু) and ৬০ মি × ৮০০ মি (২০০ ফু × ২,৬২০ ফু) respectively. রানওয়ে NL শুধু উড্ডয়নের জন্য এবং রানওয়ে SR শুধু অবতরনের জন্য।
এই বিমানবন্দরে তিনটি টার্মিনাল আছে। একটি আন্তর্জাতিক টার্মিনাল, একটি অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল এবং একটি ওয়াটারড্রোম নৌবিমান টার্মিনাল।
এই বিমানবন্দরে ট্রান্স মালদিভিয়ান এয়ারঅয়েজের কর্পোরেট সদরদপ্তর অবস্থিত।
২০১৬ ডিসেম্বর অনুযায়ী, শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্স মালদ্বীপের সবচেয়ে বড় বিদেশী বিমানসংস্থা, যারা সপ্তাহে ৩৫টি ফ্লাইট পরিচালনা করে। শ্রীলঙ্কার বন্দরনায়েকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মালদ্বীপ থেকে সবচেয়ে বেশি সরাসরি বিমান পরিচালিত হয়, শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্স, চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স, এমিরেট্স এয়ারলাইন্স, ফ্লাইদুবাইএবং কোরিয়ান এয়ার সবমিলিয়ে শ্রীলঙ্কা এবংমালদ্বীপের মধ্যে দৈনিক সর্বোচ্চ ১২টি ফ্লাইট পরিচালনা করে।[]
উইকিমিডিয়া কমন্সে সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন